Saturday 24 May, 2008

অরুণ-স্মৃতি


মনে পড়ে তার চোখটি বেঁধে,
সেই সেদিনের কানামাছি খেলা;
এক যে কিশোর আর কিশোরী,
খেলত বসে পাশাপাশি-
পুতুলের বিয়ে-বিয়ে খেলা।

শুকনো পাতা উড়ত যখন,
ধুলোর সাথে কালবৈশাখি ঝড়ে;
এক ছুটে সেই বোস-বাগানে,
পালা করে এই দুজনে;
খুঁজত তখন কোথায়-
গাছের আমটি আছে পড়ে।

সন্ধ্যাবেলায় স্কুলের শেষে,
ফিরত যখন ষষ্ঠীতলার আঁধারভরা পথে;
একটি হাত আলতো করে-
জড়িয়ে যেত অন্যটির সাথে।

পুকুরপাড়ে আমি যখন,
মাছ ধরতাম সিঁড়ির ধাপে বসে;
মাছগুলো সব পালিয়ে যেত,
টোপটা খেয়ে কখন!
মিষ্টি হাসি খিলখিলিয়ে-
আসত ভেসে ঝোপের পাশটি থেকে।

ষষ্ঠী থেকে নবমী-
বোস-বাগানের পাশের মাঠে,
মেলা বসত চার দিন;
সবকিছু যে ভুলে যেতাম-
মন হত রঙীন।

মাটির ভাঁড়ে লুকিয়ে রাখা,
গোপন সম্পদের আশ্বাস;
বারে বারে গুনি-
তবুও সেই বারো টাকা পঞ্চাশ!

নাগরদোলা, তেলেভাজা, ভেল্কিবাজি
আর টুনি বাল্বের বাহার,
ছোট্ট একটা আংটি আমি কিনে-
পরিয়েছিলাম আঙুলেতে তার।

অবুঝ মন কি বুঝেছিল,
অবাক হয়ে তাকিয়েছিল;
আমার মুখের দিকে-
আংটিখানি মুখের কাছে এনে,
ভালোবেসে অধর-পরশ তাকে-
সলাজ হেসে দিয়েছিল উপহার।

একলা বসে থাকি যখন,
সকাল থেকেই দেখা নেইকো তার;
অভিমানে মনটি আমার ভার!
বাজত তখন কানের কাছে,
কাচের চুড়ি রিনিঝিনি;
গহন চুলের নরম শাসন-
মেনে নিতাম তার।

এন্ট্রান্সে বৃত্তি পাওয়ার পরে;
মামার সাথে কলকাতাতে,
গেলাম আমি চলে;
রেলগাড়িতে যেতে যেতে মনে,
আমার পড়ছিল ক্ষণে ক্ষণে;
কান্নাভেজা একটি মেয়ের মুখ,
টানা টানা চোখ দুটি যার-
আজ ভিজেছে জলে।

এমনি করেই এই জীবনে,
অনেক বছর অবহেলে;
আমার এ মন হারিয়ে ফেলে!
যে মন সেদিন মেতেছিল,
ঘাসের বুকে লুকিয়ে থাকা-
কোন সে সুখী ফুলেরই সুবাসে;
আজ সে মন ফুরিয়ে গেছে-
এই পৃথিবীর বিষাক্ত নি:শ্বাসে।

এই পৃথিবীর এপারেতে,
আজও তুমি জেগে আছো?
আশায় বেঁধে বুক-
ওপারেতে একলা আমি,
হারিয়ে গেছি অনেক লোকের ভিড়ে;
তাই আজকে আমি চুপ!





৯৭ - ০০

No comments: