Friday 29 June, 2007

পুংকিসোনা


মামা বলেন - পড়তে বসো,
ওকি - তোমার জামায় কেন দাগ?
প্রফিট-লসের অংকে ভুল,
তাই - কাকাও করেন রাগ।
বোন ভাবেন বিয়ের কথা,
দিদির বর আসবে - সেতো দারুণ মজা!
ভাই ভাবেন পিংকিরাণী...
নাকি পুংকিসোনা, কোনটা সাজা সোজা?

চয়নিকা আমার সাথে ইশকুলে পড়ত


আমরা তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। অবশ্য চয়নিকার সংগে আমার বন্ধুতা খুব ছোটোবেলা থেকেই। একই পাড়ায় থাকি। এক ইশকুলে পড়ি। আমার মনে আছে, যখন আমরা প্রাইমারিতে পড়তাম, ও ছুট্টে এসে আমার কাছে আবদার করত - দেখি দেখি তোর হিসি দেখি।

ছেলেদের হিসি দেখে না চয়ি। অনেক কষ্টে আমি ওকে বোঝাতাম। ওর সম্পর্কে অনেক কথাই মনে পড়ছে এখন লিখতে লিখতে। ওর চোখ - সেই দৃষ্টিতে জলংগির জলে ডুব সাঁতারের অভিজ্ঞতা খুঁজে পেয়েছিলাম। আর কমলালেবুর কোয়ার মতো নিঃসংগ ব্যথার নীলাভ আবেদনে ঋদ্ধ ঠোঁট দুখানি - কতো কথাই না বলত আমার সংগে সে দুটি দিয়ে।

কাকিমার খুব চিন্তা ছিল ওনার মেয়েকে নিয়ে। মেয়েরা হবে শান্তশিষ্ট - এই ছিল তাঁর মত। আর চয়ি ছিল ঠিক তার উল্টো। কোথায় কোন কুকুরছানা কুঁইকুঁই করছে দেখে তাকে তুলে এনে আদরযত্ন করা, কোন পাখির ডানা ভেংগে গেছে বলে তাকে ঘরে নিয়ে আসা, এ সবই ছিল চয়ির খুব প্রিয় কাজ - আর তাই দেখে রাগ হয়ে যেত কাকিমার।

রাগের চোটে আমার মাকে একেক সময় বলেই ফেলতেন - আমার মেয়েটাকে নেন না দিদি আপনার ছেলের জন্যে। মানে আমার জন্যে - আমার পেশা দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন পড়াশোনায় আমি কোনোদিনই খুব একটা খারাপ ছিলাম না।

তাই শুনে চয়ির বাবা আর আমার বাবা দুজনেই প্রাণ খুলে হেসে উঠেছিলেন।

চয়ির কথা এই প্রথম আমি লিখছি সাইবারদুনিয়ায়। যে কথা এতদিন সযতনে রেখে দিয়েছিলাম নিজের মনের গোপণতম কোণে - আজ তাকে প্রকাশের আলোয় আনছি একটাই কারণে।

কিছু কিছু কথা ইংরিজিতে লিখতে নেই...লিখতে ইচ্ছে করে না...তাই এতদিন লিখিনি।

বাকিটা কালকে।





অনেকেই হয়তো খেয়াল করেছেন ব্যাপারটা।

চয়নিকার কথা একদম লিখতে পারিনি - যদিও চেষ্টা করেছি খুব।

করে ডাকলাম...লক্ষীসোনা আমার...এসো প্লিজ।

না - কি করে আসবে? বড়ো অভিমানী যে মেয়েটা।

একটু...একটু না...বেশ ভালোরকমই দুষ্টু ।

কষ্ট দিয়ে ও কি যে মজা পায় তা কে জানে।

আবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে - তাই ও এসেছে।

দেখতে পাচ্ছেন কেমনটি মুচকি মুচকি হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে? আবার বলছে - কেমন জব্দ!





আমাদের শহরে বেশ কয়েকটা লেক আছে। সেরকমই একটা লেক-নজদিক পাড়ায় আমরা থাকতুম। রোজ বিকেলে খেলা করতে যেতুম সেই সরোবরে - জায়গাটা আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় বলেই ইচ্ছে করে তার নামটি নিচ্ছিনে।

এক অচেনা শরতের শেষ বিকেলের কনে-দেখানো রাঙা আলোয় দেখেছিলুম ওকে, একটি একটি করে মাটিতে পড়ে থাকা সমস্ত ফুলগুলিকে কুড়িয়ে নিতে লেকের বুক থেকে, সেসব নাম-না-জানা বুনো উদ্ভিদের জৈবীঘ্রাণের কেউ কখনো খোঁজ রাখেনি।

খোঁজ রাখিনি আমিও - বয়োসন্ধির এক কিশোরের।

যে অনেক অবাক বিস্ময়ে আর বেশ কিছুটা পাপবোধ নিয়ে তাকিয়েছিল সেই কিশোরীর দিকে, দেখেছিল তার স্কুল-য়্যুনিফর্মের অসাবধানী অবগুণ্ঠন ভেদ করে আচমকা বেরিয়ে আসা ঊরুসন্ধির ঈষত রহস্যাভাসে অন্তর্লীন আহ্বানখানি, শুক্রাণু থেকে সন্তানধারণের এক ভাবিকালীন কোলাজ।

কিন্তু এসব অধ্যায় তো অনেকেরই জীবনে এসে থাকে - তাই নিয়ে ব্লগ লেখার কি প্রয়োজন?

প্রয়োজন আছে এসব কথার প্রকাশে নয় - এদের সাহায্যে কালহরণের।

আসল যে কথাটা বলব বলে এই লেখায় হাত দিয়েছিলাম, যা আপনাদের না জানালে ঋনীর যণ্ত্রণা নিয়েই হয়ত চলে যেতে হবে কোনো একদিন এই পৃথিবী থেকে, যার অস্তিত্বের অংগীকার আমার কাছে খুবই কষ্টের - সেই রক্তাক্ত স্বীকারোক্তির সহবাসে।





কয়েক মাস পরের কথা বলছি। সে সময় শহরে একটা খুব বিচ্ছিরি ধরণের ভাইরাল-জ্বর এসেছিল। আমাকেও ধরল। দিনে চার-ছটা ট্যাবলেট খেয়েও জ্বর কিছুতেই আর দুইয়ের নিচে নামেনা। বাবা-মা চিন্তিতমুখে ডাক্তারের কাছে ছুটলেন - হয়তো নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হতে পারে।

আমি একা একা চুপচাপ ঘরে শুয়ে কাজের লোকের রান্নার হাতাখুন্তির টুংটাং শুনছি। হঠাত বেলের শব্দে দেখি চয়ি ঘরে ঢুকছে।

তুই স্কুলে যাসনি?

ও আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল -

তুই ভালো হয়ে যাবি।

জ্বরের ঘোর তো ছিলই, তবু তার মাঝেই অনুভব করলাম ঘুঘুপাখির মতো ওর অর্ধ-তরল বুকদুটিতে আমার মুখ ডুবে যাচ্ছে আস্তে আস্তে, নিজেরই অজান্তে হাত দুটি সেঁকা হয়ে যাচ্ছে তার নিতম্বের ওমে।

নারী আজ মধ্যযামিনী, রক্তমাংস-স্বেদক্লেদের মহোল্লাসের মাঝে মানবী দেবী হয়ে উঠেছেন, কুমারিতণ্ত্রে যেরূপ বর্ণনা পাওয়া যায় তাঁর।

পীনস্তনী, পদ্মনাভি, রক্তাভ যোনি - সমস্ত কিছু দিয়ে সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর অভয়দান, কোনো ভয় নেই তোর, ভালো হয়ে যাবি।

এই কি মায়া - নাকি এতোদিন ধরে যা দেখে এসেছি তাই ছিল মনের ভ্রম?

ঘোর কি তবে সত্যিই কাটল এতোদিনে - মেইট্রিক্সের নিওর মতো?

কোনটা চোখের ভুল - কোনটা?

ভয়ে আমি চোখ বুজে ফেলেছিলাম।

এর পরে ঠিক কি হয়েছিল তা জানিনা। চোখ খুলে দেখি মা-বাবা মাথার কাছে বসে আছেন।





ঠিক সে রাতেই আমার জ্বর ছেড়ে গিয়েছিল। অবশ্য তার পরও বেশ কিছুদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছিল ডাক্তারের কড়া নির্দেশে।

কারো বারণ না শুনে চয়নিকাদের বাড়ি গেলাম সেই দুর্বল শরীর নিয়েই।

ছোট্টো একটা খবর আমার জন্যে অপেক্ষা করে ছিল সেখানে।





মাত্র দুদিনের জ্বরে চয়নিকা আমাদের সবাইকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে।





যখন আমি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছি, ঠিক তখনই চয়ি শয্যাশায়ী ছিল, তাই খুব স্বাভাবিক কারণেই কেউ আমায় খবরটা জানায়নি।





চয়ি - তুমি ছিলে আমার নিয়ম-ভাঙার-নিয়ম, আমার ফ্র্যাক্টাল-সুখস্বপ্ন, আমারই কেয়স-লজিক। আজ তুমি আমার ব্যাধি... আমার ভালোবাসা নিয়ে এমন এক জায়গায় চলে গেছো...যেখানে সব প্রশ্ন গেছে থেমে।

তবুও শেষ একটা প্রশ্ন তোমায় আমি করতে চাই।





এতো অভিমান করে চলে যেতে আছে কখনো?