Saturday 24 May, 2008

মুখোশের আড়ালে


ইদানিং ভার্চুয়াল চরিত্র নিয়ে বড়ই জল ঘোলা হচ্ছে এই পদ্মদীঘিতে। এই জ্বালাময়ী আইডিয়াটি যার ঊর্বর মস্তিস্ক থেকে বের হয়েছে, তাকে আদর করে শালা বলতে পারছি না, সে পথ বন্ধ - কারণটা বলছি একটু পরে।

যাই হোক, সবাইকে প্রথমেই একটা কথা বলে রাখি, যাকে উদ্দেশ্য করে অভিনন্দন - আপনার জন্যই রইল সিংহাসন শীর্ষক লেখাটি লিখেছিলাম - আজকে তাঁর ভার্চুয়াল চরিত্র বিশ্লেষণের কোনোরকম ইচ্ছেই আমার নেই।

কারণ, শুধু তাঁর নয়, কারো কোনোরকম অ্যানালিসিসের যোগ্যতাই আমার নেই।

আজকের লেখা মৈথুনানন্দ নামক জনৈক বিকৃতমস্তিষ্ক নবস্বাক্ষরের কিছু একান্ত অনুভূতির, খেয়ালী খটকার খসড়া মাত্র, পড়া হয়ে গেলে গোল্লা পাকিয়ে বাস্কেটে ফেলে দেবেন দয়া করে।





হঠাতই কাল রাত্রে একটা বিষম খটকা লাগল - মনে হল রাগ ইমনের ঐ চোখ দুইটি যেন বড়ই চেনা।

ক্লিসে বলা চলবে না কিন্তু - মনে রাখবেন আপনারা একজন সদ্যস্বাক্ষরের মুখ থেকে কথা শুনছেন।

মনে হল এই ভদ্রমহিলাকে আরও কোথায় কোথায় যেন দেখেছি, এবং তা যদি শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়, তবে কি হবে ভাবতে ভাবতে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম।

সেকেন্ড-লাইফ নামের অতীব জনপ্রিয় গেমটির কথা মনে পড়ে গেল। আসলে এখানে আমরা তো সবাই একেকটা অল্টার্নেট রিয়্যালিটি, এবং দুটি ভিন্ন জাগতিক অর-চরিত্রকে মেলাই বলুন তো কোন সাহসে, কবি তো বলেই খালাস - মেলাবেন তিনি মেলাবেন।

আর তারা যদি ভুল করেও একে অপরের কাছে চলে আসে, তবে ভয়ংকর কিছু ঘটবে নাতো, বস্তু ও পরাবস্তুর সংঘর্ষের মতো?

শুরু করে দিলাম একই সংগে বিতর্ক ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এই ব্যক্তিটি সম্পর্কে তত্ব-তালাশ, নিন্দুকেরা যাকে আদর করে বলেন রাগি মন।

এই অপারেশন রাগ ইমন করতে গিয়ে আমার প্রশ্নের উত্তর তো পেলামই - তবে তার থেকেও বড়ো একটা জিনিষ হস্তগত হল।

বাংলা ভাষায় যাকে বলে সম্বিত।

বুঝতে পারলেন না? রাজা তোমার কাপড় কোথায়...একথাটা শোনার পরে সে যা ফিরে পেয়েছিল...ঠিক তাই।

আচ্ছা, কেউ বলতে পারেন, কেন এই স্ববিরোধিতার বিষপানে সবার এত আসক্তি?

দিন কতক আগে ওনাকে নিয়ে যে লেখাটা ( অভিনন্দন... ) লিখে ফেললাম - তার সত্যিই কি কোনো প্রয়োজন ছিল? এখানে কি করতে এসেছি আমি, টপ রেটেড লেখা লিখতে, নাকি মেরিট লিস্টে নাম তুলতে?

উনি আমাকে যে কথা বলেছিলেন বলে ঐ লেখাটা ফট করে ল্যাপটপ খুলে লিখে ফেলেছিলুম, সে তো ছিল আসলে এক দিনের রাজা হওয়ার প্রস্তাবেরই মত, এই কাঙালের তো আর কোনো প্রিয়জন নেই যে তাকে বোন কি দিদির অধিকারে একটু বকুনি দেবে কোনোদিন।

যাই হোক, ওনাকে যা বলেছি, আমি জানি ওনার মতো উদারহৃদয়া মেয়ে তা মনে নেননি - অভিমানের কথা, মুখের কথা, এসব কথা কি কেউ কখনো মনে নেয়?

এই ওনার সম্বন্ধে খোঁজ-খবর করতে করতে আমি কিন্তু ওনার অনেকটা কাছে চলে এসেছি - যে উদ্দেশ্যে আমার এখানে আসা।

সবাই সবার মনের কাছাকাছি আসব, সুখ-দু:খ হাসি-কান্না থেকে আরম্ভ করে জীবনের রূপ-রস-শব্দ-স্পর্শ-গন্ধ, সব কিছুই ভাগ করে নেবো একসাথে - বাস্তবতার অপূর্ণতা সক্কলে প্রাণ ভরে মিটিয়ে নেব এখানে এসে।

আমি ওনার কোনো কবিতা পড়িনি, আমি কারোরই কোনো কবিতা পড়িনি, কারণ একবার কবিতা পড়তে আরম্ভ করলে এক মৃত ব্যক্তির জেগে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বিস্তর।

মনে পড়ছে না বুঝি, সেই সে সেই ফ্রিতে-কবি-হয়ে-যাওয়া ছেলেটার কথা বলেছিলাম না একদিন, চয়নিকা বলে একটি মেয়ে যার সাথে ইশকুলে পড়ত - সেই পাগলাটার কথা বলছি।

আর মড়া যদি একবার জেগে যায়, তাহলে খুউব বিচ্ছিরি ব্যাপার হবে, ফারাওদের নিয়ে লেখা টিনটিন কমিক্সের সেই মমির মতো - হাবুভাইয়ের ভূত ঠিক এক্ষুণি আপনার ঘাড়ে চাপলে যে অবস্থা হবে।

ব্যথাও লাগতে পারে, হিমু দাদাবাবু যদি কখনো সুন্দরী বালিকাদের বদলে ভুল করে আপনাকে কামড়ে দেয়, তখন যতটা লাগবে - ঠিক ততটাই।

অতএব আমরা আবার রাগ ইমনের কাছে ফিরে যাই। ওনার সম্পর্কে একটা সার্বজনীন ধারণা চালু আছে, যে উনি নিজের লেখার ব্যাপারে খুব সংবেদী ও ডিফেন্সিভ, এবং অতি অবশ্যই আইকনক্ল্যাস্ট - কিন্তু শুধু এটুকুই কি সব?

কোনটা তাঁর মুখোশ - আর কোনটিই বা তাঁর মুখ?

উনি কি সেই রাশিয়ান ডল মারুস্কা...পুতুলের মধ্যে পুতুল...আবার তার ভেতরে আরো একটা পুতুল!

ওর এই অতলস্পর্শী মনের তল পাবে কে?

যে মন তাকে নিষেধ করে বীক্ষণ নামের বাংলা ই-জিনে লেখা দিয়েও লেখক-পরিচিতিতে সবাক হতে।

আমি খুব ভালো করেই জানি, যারা ওর সাদা-কালো পাসপোর্ট ছবিটি প্রথমবার দেখবেন, তাঁরা আমারই মতো অসীম বিস্ময়ে চিতকার করে উঠবেন - এও কি সম্ভব?

এই শান্তশিষ্ট সাধারণ মুখশ্রীর মেয়েটার মধ্যে এত আগুন?

আরে এই মেয়েটাকে তো রোজই দেখছি একবার করে, কখনো তো খেয়াল করিনি, যে এ-ই আমিই সেই মেয়ের মেয়ে - এক যে আছে কন্যার সেই কন্যা।

যে আইকনক্ল্যাস্টের চেয়েও বেশি কিছু।

এ যেন রুপকথার সেই ঘুঁটেকুড়ুনির গল্প - যে রোজ রাতে ঠিক তিনবার হাততালি দিলেই এক পরমাসুন্দরী রাজকন্যা হয়ে যেতো।

বয়সের হিসেব করে দেখলুম উনি আমার চেয়ে এক-আধ বছরের ছোটো কি বড়ো হবেন।

খুউব জানতে ইচ্ছে হল যে এই আপাত-রুক্ষ নকাবটির পেছনে আসলে কি আছে।

একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখতে পেলাম, যার মনটা এক্কেবারে সাদা, সাদা জুঁইয়ের মতো অনাবিল ও পবিত্র - মুক্তোর মতো ঝকঝকে।

আর মুক্তোর প্রকৃত সমঝদার এই পৃথিবীতে হাতে গোণা, তাই তাকে প্রকৃতির নির্দেশ মেনে ঝিনুকের শক্ত খোলকের মধ্যে থাকতে হয়, সেটা তার দোষ নয় - আমাদের দৈন্য।

রাগ ইমন নামের মেয়েটি এতটাই ইনোসেন্ট যে, তার লেখা নিয়ে কেউ কিছু বললেই, ঠিক একটা বাচ্চা মেয়ের মতোই পজেসিভ হয়ে ওঠে সে - এই তুমি আমার খেলনায় হাত দিয়েছো কেন!

এই মেয়েটি যে বিশাল কর্মকান্ডের কান্ডারী, তার সবটা না হলেও কিছুটা জানতে পেরেছি, জানতে পেরেছি ও বাচচাদের ও অন্যান্যদের জন্যে কি কি করছে।

বইমেলায় দেওয়া ওর অটোগ্র্যাফ দেখে, সাবলীল হস্তাক্ষর থেকে বুঝতে পেরেছি ওর সাদা মনে কোনো কাদা নেই, তা অকপটভাবে কপটতাহীন।

ওর ডাক নামটিও বেশ মজার - আমাদের বাড়ির রঙের মতো!





প্রিয় রাগ ইমন!

তোমায় কোনো শুভেচ্ছা জানাচ্ছি না, জানি যে এসবের তোমার কোনো প্রয়োজন নেই, কারো কোনো শুভেচ্ছা ছাড়াই তুমি এতটা পথ হেঁটে এসেছো - লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারবে তুমি স্বমহিমায়।

কাউকে কিছু দেওয়ার মতো কোনো যোগ্যতাই আমার নেই - বরঞ্চ তোমাদের কাছ থেকে তা পেলেই হয়ত জীবনের হেরে যাওয়া খেলাটায় জিতলেও জিততে পারি।

শুধু একটা অনুরোধই করছি তোমায়; ভাই বলে মেনে নেবে এ কামনা করিনা, দাদা বলে স্বীকার করবে এ আব্দার রাখিনা, বন্ধু বলে পাশে হাঁটার সুযোগ দেবে এ স্বপ্ন দেখিনা - এবার থেকে অন্তত: নীরব অনুসরণের অনুমতিটুকু দেবে তো আমায়?

No comments: